প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন এবং সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাদের বিচার-বিবেচনা ও যুক্তিপূর্ণ উপলব্ধি রয়েছে। তাদের উচিত, একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করা।
মানবাধিকার সনদের ঘোষণা মতে, প্রত্যেক মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, সহযোগিতা ও মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।
আমরা তোমাদেরকে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে এবং দায়িত্ব নিতে অনুপ্রেরণা দিতে চাই।
নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হলে তোমাকে জানতে হবে:
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষদের নিয়ে মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশ এই মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে।
এই অধিকারগুলো ১০-২৪ বছরের তরুণ-তরুণীসহ সকল মানুষের।
মেয়ে-ছেলে, ধনী-গরিব, বিবাহিত-অবিবাহিত, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, যৌনতার ধরণ, প্রতিবন্ধী অথবা স্বাস্থ্যগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ যেমন- এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি; নির্বিশেষে সকল যুবা জনগোষ্ঠীর জন্য এই অধিকার প্রযোজ্য।
তরুণরা নিজেদের ব্যাপারে নিজেরা কথা বলতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম: এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত।
সকলের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
মানবাধিকার সনদে অনেক অধিকার রয়েছে। কিন্তু শুধু তরুণদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত বারোটি অধিকার সম্বন্ধে কথা বলব। অধিকারগুলো তোমাদের জানা দরকার।
১. প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার রয়েছে। গর্ভজনিত কারণে কোনো নারীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করা যাবে না।
২. প্রত্যেক নারী ও পুরুষেরই স্বাধীন ও নিরাপদ যৌন জীবন উপভোগ করার ও প্রজনন ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে। জোর-জবরদস্তি করে গর্ভধারণ, বন্ধ্যাকরণ বা গর্ভপাত করানো যাবে না।
৩. যৌন ও প্রজনন অধিকারসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা, ন্যায্যতা এবং সকল প্রকার বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার অধিকার।
৪. যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে পছন্দ ও গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার।
৫. যৌন ও প্রজনন বিষয়ে মুক্ত চিন্তার অধিকার। ধর্মীয় ব্যাখ্যার কড়া সীমানা, বিশ্বাস, দর্শন ও প্রচলিত প্রথার কু-প্রভাব মুক্ত প্রজননস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা পাওয়ার অধিকার।
৬. ব্যক্তি ও পরিবারের স্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে জানা ও শেখার অধিকার।
৭. স্বাস্থ্য পরিচর্যা কিংবা সুরক্ষার অধিকার। তথ্য, সেবা গ্রহণের অধিকার, পছন্দসই, নিরাপদ, গোপনীয়, বিশ্বস্ত, আরামদায়ক, মর্যাদাপূর্ণ নিয়মিত সেবা প্রাপ্তি ও মতামত প্রকাশের অধিকার।
৮. যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়টিকে অগ্রাধিকার প্রদানের লক্ষ্যে নীতি নির্ধারক/সরকারকে প্রভাবিত করার অধিকার।
৯. বিবাহ কিংবা পরিবার গঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার।
১০. সন্তান গ্রহণ করা কিংবা কখন, কতটি সন্তান নেবেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার।
১১. বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ পাওয়ার অধিকার। উন্নততর প্রযুক্তির ফলে প্রাপ্ত নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার।
১২. অপহরণ, অপব্যবহারসহ যৌন নির্যাতন থেকে শিশুকে রক্ষা করতে শিশু অধিকার সংরক্ষণ এবং অন্যদের যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ থেকে রক্ষা করার অধিকার।
তোমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে-
প্রত্যেকের নিজের মতামত দেবার অধিকার রয়েছে। সেই সাথে অন্যের মতামত ও পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার দায়িত্ব রয়েছে।
রুবিনাও ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে পারে এবং ছেলেদের মতো সুনাম অর্জন করতে পারে।
মানবাধিকার বলে সাহানার গর্ভনিরোধক পদ্ধতির ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য পাবার অধিকার আছে, যাতে সে তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকাল ও ছেলে-মেয়েদের বেড়ে ওঠার সাথে জড়িত বিষয়সমূহ শিক্ষক ও অভিভাবকের জানা থাকলে কিশোর-কিশোরীদের একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হতে সাহায্য করে। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব ইত্যাদি বিষয়সমূহ দ্বায়িত্বশীলতার সাথে প্রকাশ করতে পারে। এটা কিশোর-কিশোরীদের ঝুঁকিপূণ অবস্থা যেমন: যৌনবাহিত রোগ/এইচআইভি সংক্রমণ অথবা অল্পবয়সে গর্ভধারণ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।
কিশোর-কিশোরীদেরকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহিত করে না বা শেখায়ও না।
এটি বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশ সরকার তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তথ্য পাবার অধিকারকে সমর্থন করে।
সবারই গোপনীয়তা বজায় রেখে, কম খরচে, সহজলভ্য ও উন্নতমানের এবং সম্মানের সাথে স্বাস্থ্য সেবা পাবার অধিকার রয়েছে।
মূলত একজন স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্যসেবা পেতে আসা যে কারোর বয়স বা আচরণের বিচার করতে পারেন না।
সেবা গ্রহণ করতে আসা সকলকে সমানভাবে সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা একজন স্বাস্থ্যকর্মীর দায়িত্ব ।
যেকোনো ব্যক্তির যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। সেক্ষেত্রে সকলের অনুভূতি ও মতামত শোনা এবং তা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে।
কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বিয়ে এবং গর্ভধারণ একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। আসলে জোর করে বিয়ে দেওয়া কিশোরীদের অধিকারের লঙ্ঘন।
শাহিনা ঢাকা শহরের একটি থিয়েটার দলের নির্দেশক। সে একটি যুব সংগঠন এবং থিয়েটার দলের সাথে জড়িত।
তারা সাধারণ জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে এবং বিভিন্ন বিষয় যেমন- পরিবার পরিকল্পনা, যৌনবাহিত রোগ এবং এইচআইভি/এইডস, জেন্ডার এবং ভূমি সংক্রান্ত আইন এর ব্যপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে।
হ্যাঁ তার আছে এবং তোমাদেরও রয়েছে!
তুমি মানবাধিকারের ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হতে পারো।
আমরা দেখতে পাই যে আমাদের অনেক অধিকার রয়েছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব কার?
আসলে উত্তর হচ্ছে সকলের! অবশ্যই সরকারের এবং সমাজের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
তোমার নিজের অধিকার চাওয়ার সাথে সাথে অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে ভূমিকা পালন করা যায়।
তোমার সকলের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে কিন্তু কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
তুমি দেখতে পাচ্ছো যে, কিশোর-কিশোরী হিসেবে তোমাদের অধিকারের পাশাপাশি অনেক দায়িত্বও রয়েছে। এই অধিকার নিশ্চিত করা যতটুকু সরকারের ওপর নির্ভর করে ততটুকু তোমাদের ওপরও নির্ভর করে।
তোমার এলাকায় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারবে কি?